Friday 28 October 2016

আলোর আলোয় মাতোয়ারা সারা ভুবন

Paramita Gharai: 

ProMASS, Oct 28, 2016: 
আর কয়েকদিন পরেই দীপাবলী। ভারতবর্ষের প্রাচীন উৎসব। এই উৎসব সম্পর্কে হিন্দু পুরানে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। জৈন ও শিখ ধর্মীয় মানুষরা এই উৎসবের সাথে জুড়েছেন তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যকে। পুরান বা ইতিহাস যাই হোক সারা ভারত উপমহাদেশে পালিত হয় আলোর উৎসব দীপাবলী। অশুভ শক্তিকে দমন করে শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করবার প্রতীকী উৎসব দীপাবলী।  ত্রিপুরার মাতাবাড়ি ইতিমধ্যেই সেজে উঠেছে আলোকমালায়। চলছে দীপ উৎসব উপলক্ষ্যে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলার ঘরে ঘরে একইসঙ্গে চলছে কালীপুজোর প্রস্তুতি। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এদিন চলে ধনলক্ষ্মীর আরাধনা। আতশবাজি আর দীপের আলোয় সকল অন্ধকার দূর করার উৎসব দীপাবলী।





পৃথিবী বিভিন্ন জায়গায় বছরের বিভিন্ন সময়ে পালিত হয় আমাদের দীপাবলীর মতোই আলোর উৎসব। প্রতিটি উৎসবের প্রেক্ষাপটে আছে হয় পুরান বা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রচলিত কোনো কাহিনী।
ইহুদীদের আলোর উৎসব হল হানুখ। ইহুদীদের ক্যালেন্ডারের কিসলেভ মাস শুরুর সময়ে আটদিন ধরে চলে এই আলোর উৎসব। ‌খ্রীষ্টপূর্ব ২০০ বছর আগে ইহুদীরা সিরিয়ার গ্রীক রাজার কাছে হেরে যায়।

জেরুসালেম দখল নেওয়ার পর গ্রীকরা ইহুদীদের মন্দির ধ্বংস করে। তাদেরকে ধর্মান্তরিত হয়ে গ্রীকদের তখনকার প্রচলিত ধর্ম নিতে বলা হয়। তারা রাজী না হলে তাদের হত্যা করা হয়। ১৬৫ খ্রীষ্টপূ্র্বাব্দে ইহুদীরা আবার জেরুসালেম উদ্ধার করে এবং মন্দির পুণ:‌ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষ্যেই পালিত হয় হানুখ।‌ আটটি প্রদীপ জ্বেলে পালিত হয় হানুখ। শেষ দিনে আরো একটি প্রদীপ জ্বালানো হয়।

নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হল্যান্ডে পালিত হয় সেন্ট মার্টিনস্ ডে। এটি মূলত‌‌:‌ ছোটোদের উৎসব। গান গাইতে গাইতে আর ছড়া বলতে বলতে বাচ্চারা আলো [‌লন্ঠন]‌ হাতে নিয়ে ছুটোছুটি করে। ইউরোপে কোনো কোনো অংশে এটি ‘‌হারভেস্ট ফেস্টিভাল’‌ হিসেবে পালন করা হয়।

চীনদেশের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ‌প্রথম মাসের ১৫তম দিনে পালিত হয় ‘ল্যান্টার্ন ফেস্টিভ্যাল’‌।‌ মূলত বছরের প্রথম চোদ্দদিন বিভিন্ন রকমভাবে চীনা ঐতিহ্য অনুযায়ী উৎসব চলে। পনেরোতম দিনে পরিবারের সবাই লন্ঠন জ্বালিয়ে উদযাপন করে আলোর উৎসব। লন্ঠনগুলো লাল রঙের হয়। এই উৎসব অশুভ শক্তি দূর করে সুখ ও সমৃদ্ধির কামনায় পালিত হয়।

থাইল্যান্ডের আলোর উৎসবের নাম ‘‌লোই ক্রাথং’। ‘‌লোই’‌ মানে ভাসা আর ‘‌ক্রাথং ’‌ মানে পদ্মফুল। কলাপাতা কেটে তাকে পদ্মফুলের আকৃতি দেওয়া হয়। ‌তার ওপর রাখা হয় একটা মোমবাতি, তিনটে ধূপকাঠি, কিছু ফুল আর কয়েন। নভেম্বর মাসের শুরুতে চাঁদ উঠলে কোনো বড় জলাশয়ে ভাসানো হয় ক্রাথং,  সমস্ত দুর্ভাগ্যকে সরিয়ে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির কামনা করা হয়।

আমাদের দীপাবলীর সময়েই আমেরিকা সহ বহু দেশেই পালিত হয় হ্যালোউইন। এর পেছনে লুকিয়ে আছে প্রায় দুহাজার বছর আগের সংস্কার। এখন যেটা আয়ারল্যান্ড সেখানে ছিল কেল্টিক জাতির বাসভূমি। শীত শুরু হবার সাথে সাথেই শুরু হত নানা ধরণের কষ্ট। বিভিন্ন রোগ ও মৃত্যু এসে থাবা বসাতো তাদের জীবনে। ১লা নভেম্বর পালিত হয় ‘‌অল সেন্টস্ ডে’‌। তার আগের দিন অর্থাৎ ৩১শে অক্টোবর ‘‌অল হ্যালোস্ ইভ’ বা ‘‌হ্যালোউইন’‌‌। এদিন নাকি মৃত্যুলোক থেকে সব বিদেহী আত্মারা পৃথিবীতে আসে। তারা পুরোহিতকে আসন্ন শীত কেমন কাটবে সেকথা জানিয়ে যায়। কেল্টিক জনজাতির এই মিথ্ পরে মিশে যায় খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে।


বিচিত্র পোশাক পরে ‘পার্টি’র আয়োজন করা হয় এদিন। তাছাড়া বড় বড় কুমড়োগুলোর ভেতর পরিষ্কার করে বাইরের খোসাকে কেটে বানানো হয় ভূতের চোখ নাক মুখ। কুমড়োর ভেতরে জ্বালানো হয় আলো। হ্যালোউইনের সন্ধ্যেতে আমেরিকা সহ অনেক পাশ্চাত্য দেশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সেজে ওঠে ভৌতিক আলোর আবহে। আর চলে ‘‌বনফায়ার’‌ - অনেকটা দোলের সময়ে আমাদের নেড়াপোড়ার মতো।

সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতির মধ্যে প্রচলিত আছে আলোকেন্দ্রিক বিভিন্ন উৎসব। মেক্সিকোর ‘‌অল উইচ ডে’‌,  আমেরিকান আফ্রিকানদের ‘‌কওয়ানজা’‌ উৎসব, ইজিপ্টের ৬ এবং ৭ ই জানুয়ারির খ্রীষ্টমাস, ব্রাজিলের ৩১ শে ডিসেম্বর, জাপানের আমুরি নেতুবা মাৎসুরি, স্পেনের লাস্ ফেলাস্, ফ্রান্সের লিয়ন ছাড়াও রয়েছে আরো আরো অনেক আলোর উৎসব। উৎসব যেখানে যাই হোক সব আলোর উৎসবেরই একই উদ্দেশ্য – অশুভ শক্তির নাশ করে শুভ শক্তির জাগরণ ।

No comments:

Post a Comment